সহজেই ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে আজকের এই পোস্ট। আপনি যদি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চান, তবে পোস্টটি আপনার জন্যই।

আমাদের দেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে। একেক ব্যাংকের সেবার ধরণের একেক রকম। তবে, আমাদের সবারই একটি করে ব্যাংক একাউন্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনার যদি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকে, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর কিভাবে একটি একাউন্ট করতে হবে জানতে পারবেন।

এছাড়াও, ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এসব বিষয় নিয়েও আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই, কিভাবে সহজেই একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয় জানতে চাইলে শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ুন।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

প্রতিটি ব্যাংকের একের অধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসাব থাকে। আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন বা হিসাব খুলতে চাচ্ছেন, সেই ব্যাংকের উক্ত হিসাব খুলতে কি কি লাগবে তা অন্য ব্যাংকের থেকে আলাদা হতে পারে।

তবে, অধিকাংশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে কিছু সাধারণ তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে। নিচে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে তার একটি বিস্তারিত তালিকা উল্লেখ করে দিয়েছি।

নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র

বাংলাদেশি কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে হবে। বাংলাদেশে বসবাস করে না এমন কেউ বাংলাদেশি কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।

এছাড়াও, আপনি যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক, তা প্রমাণ করার জন্য আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হবে। যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে, তবে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।

পাসপোর্ট সাইজের ছবি

ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে চাইলে অবশ্যই একাউন্ট হোল্ডার এর পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি লাগবে। আপনি যদি একাউন্ট তৈরি করতে চান, তবে ০২ কপি সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়াও, ব্যাংক ভেদে ছবির পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

আবেদন ফরম

যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন, উক্ত ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করার ফরম লাগবে। আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন, সেই ব্যাংক থেকে এই ফরমটি দেয়া হবে। চাইলে আপনি উক্ত ফরমটি নিজে পূরণ করতে পারেন অথবা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার নিকট থেকে পূরণ করে নিতে পারেন।

সাধারণত, ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেই এই ফরমটি পূরণ করে দিয়ে থাকে। আপনাকে শুধু সকল তথ্য তাদেরকে দিতে হবে।

আরও পড়ুন — অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

নমিনীর ছবি

একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে একজন নমিনি লাগে। আপনি চাইলে পিতা/মাতা বা ভাই-বোন যে কাউকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর নমিনি করতে পারেন। যাকে নমিনী করবেন, তার পাসপোর্ট সাইজের ০১ কপি ছবি দিতে হবে। অবশ্যই সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি হতে হবে।

নমিনীর জাতীয় পরিচয় পত্র

যে ব্যক্তিকে আপনার ব্যাংক একাউন্টের নমিনি করবেন, তার জাতীয় পরিচয় পত্রের এক কপি ফটোকপি দিতে হবে। যদি আপনার পিতা বা মাতাকে নমিনি করেন, তার এক কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

ইউটিলিটি বিলের কপি

এটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় ইউটিলিটি বিলের কপি দিতে হয়। আপনার বাসার বিদ্যুৎ বিলের/গ্যাস বিলের/পানি যেকোনো একটি ইউটিলিটি বিলের কপি দিতে হবে।

অনেক ব্যাংকে ইউটিলিটি বিলের কপি নেয় না। তবে, সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন – ব্যাংকে চাকরি কি হারাম

একাউন্ট খোলার চার্জ

অধিকাংশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খোলার সময় অ্যাকাউন্ট তৈরির চার্জ নিয়ে থাকে। সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ টাকা অব্দি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার চার্জ নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। যে পরিমাণ অর্থ দিয়ে আপনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খুলবেন, সেটি ব্লক মানি অবস্থায় আপনার অ্যাকাউন্ট এ থেকে যাবে।

তবে, আপনি চাইলে অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ করে এই পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে নিতে পারবেন। এছাড়াও , অনেক ব্যাংকে একদম ফ্রিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, কোনো ব্লক মানি থাকে না।

সচল মোবাইল নাম্বার

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে। যেকোনো একটি নাম্বার সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। এই নাম্বারে তারা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি তৈরি করে একটিভ করে দিবে।

অন্যান্য কাগজপত্র

উপরোক্ত এসব ডকুমেন্ট ছাড়াও আরও অনেক কাগজপত্র লাগতে পারে একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময়। যেমন – আপনি যদি একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে চান, তাহলে আপনার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা যেকোনো পরিক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট। অথবা, আপনি যদি একটি কারেন্ট একাউন্ট খুলতে চান, তবে নাগরিক সনদ সহ অন্যান্য কাগজ লাগতে পারে

আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন, সেই ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা স্থানীয় ব্রাঞ্চ ভিজিট করলেই একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে কি কি লাগে তা জানতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে

ব্যাংক ভেদে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে এটির পার্থক্য হয়ে থাকে। আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট করতে চাচ্ছেন, সেই ব্যাংকের ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী একাউন্ট তৈরির চার্জ আলাদা হতে পারে।

নিচে ইসলামি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক সহ জনপ্রিয় কয়েকটি বাংলাদেশি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে তার একটি চার্ট উল্লেখ করে দিয়েছি।

ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
ব্রাক ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
বেসিক ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন
সিটি ব্যাংক একাউন্ট চার্জচার্জ জানতে ক্লিক করুন

এছাড়াও, বাংলাদেশে আরও অনেক ব্যাংক রয়েছে। কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে তা আপনি উক্ত ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা ব্রাঞ্চ ভিজিট করলেই জেনে নিতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রথমেই সিলেক্ট করতে হবে আপনি কোন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন। যেমন, ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম আলাদা, আবার ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম আলাদা। তাই, আপনি যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন, সেই ব্যাংকের নিকটস্থ যেকোনো ব্রাঞ্চে যেতে হবে একাউন্ট খোলার জন্য।

মনে করুন আপনি ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন। তাহলে, আপনাকে ইসলামি ব্যাংকের যেকোনো নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যেতে হবে। এরপর, সেখানে থাকা কর্মকর্তাদের জানাতে হবে যে আপনি একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন। তাহলে তারা আপনার থেকে সকল তথ্য চাইবে।

উপরে উল্লিখিত সকল তথ্য সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এরপর, তাদেরকে সকল তথ্য দিলে তারাই আপনাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম পূরণ করে দিবে। এরপর, তারা আপনার নাম্বার নিবে। ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার জন্য আপনার আবেদন সম্পন্ন হয়েছে।

এখন, আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ব্যাংক থেকে আপনার নাম্বারে একটি এসএমএস আসার জন্য। এসএমএস আসলে ব্রাঞ্চে গিয়ে আপনি ডেবিট কার্ড বা চেক বই নিতে পারবেন। অতঃপর, সেগুলো দিয়ে লেনদেন করতে পারবেন।

ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ইসলামি ব্যাংকের ওয়েবসাইট ভিজিট করে একটি একাউন্ট তৈরি করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে এবং কিভাবে একটি ইসলামি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয় সেটি জেনে নিতে পারবেন।

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম

ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংকের যেকোনো নিকটস্থ ব্রাঞ্চ ভিজিট করতে পারেন বা ডাচ বাংলা ব্যাংক ওয়েবসাইট ভিজিট করে একটি একাউন্ট তৈরি করতে কি কি লাগে জেনে সেগুলো নিয়ে ব্রাঞ্চে গিয়ে একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা

উপরে উল্লিখিত ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসরণ করে আপনি যদি একটি ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করেন, তবে অনেক সুবিধা পাবেন। যেমন একটি ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার পর আপনার একটি ব্যাংক হিসাব হবে। আপনি চাইলে একাউন্টে টাকা জমা করতে পারবেন এবং ব্যাংক দিয়েই সব ধরণের লেনদেন করতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সব ধরণের বিল পরিশোধ করা সম্ভব। এছাড়াও, বেতন নেয়া বা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবেন ব্যাংক একাউন্ট দিয়েই। এছাড়াও, ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করলে ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। এই কার্ড দিয়ে আপনি যেকোনো POS মেশিনের মাধ্যমে যেকোনো কিছু ক্রয় করা বা, সব ধরণের লেনদেন করতে পারবেন।

এছাড়াও, একটি ক্রেডিট কার্ড থাকলে আপনি চাইলে যেকোনো ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। ব্যাংক একাউন্টের সাথে চেক বই দেয়া হয়। এই চেক বই দিয়ে আপনি বেতন পরিশোধ বা দেনা পরিশোধ সহ অনেক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

FAQ

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হলে কি কি লাগে?

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনীর ছবি এবং আইডি কার্ড, মোবাইল নাম্বার এবং ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাগে।

ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়?

ব্যাংক একাউন্টে আপনি চাইলে সর্বনিম্ন ০ শুন্য টাকা রাখতে পারবেন। ব্যাংক একাউন্টে বাধ্যতামূলক টাকা রাখতে হবে এমন কোনো বাধাবাধ্যকতা নেই। তবে, আপনি ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় যে ব্লক মানি রেখেছেন, সেটি উত্তোলন করতে পারবেন না।

কত বছর বয়সে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়?

আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হলে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন। যদি এর বেশি হয়, তবে চাইলে স্টুডেন্ট একাউন্ট বা সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন।

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে সহজেই ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আপনার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।

ব্যাংকিং বিষয়ক আরও এমন তথ্য জানতে নিচের পোস্টগুলো পড়তে পারেন এবং নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *