মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কিন্তু মাল্টা যেতে কি কি লাগে এবং মাল্টা কাজের ভিসা করতে কত টাকা লাগে জানেন না? আজকের এই পোস্টে মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

আমাদের দেশের অনেকেই প্রবাস যেতে চান অর্থ উপার্জন করার জন্য। এজন্য, অনেকেই সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত সহ বিভিন্ন দেশ বেছে নেন। কারও আবার ইচ্ছে মাল্টা গিয়ে টাকা ইনকাম করা। আমাদের দেশের অনেকেই মাল্টায় কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন।

তাই, অনেকেই নতুন করে মাল্টা যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু, মাল্টা যেতে কি কি লাগে এবং খরচ কত জানেন না। তো চলুন, এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে হলে প্রথমেই মাল্টায় থাকা কোনো নিয়োগকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। এরপর, নিয়োগকর্তা সকল কাজ করে একটি ওয়ার্ক পারমিট দিবে। এই ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে ভিসা করতে ৩-৪ লক্ষ টাকা লাগবে। এরপর, মাল্টা গিয়ে সেই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে পারবেন।

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার পর ভিসা আবেদন করতে পারবেন ভিএফএস গ্লোবাল কিংবা যেকোনো ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ১.৫ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। সর্বমোট ৩-৪ লক্ষ টাকা হলে মাল্টা কাজের ভিসায় যেতে পারবেন।

মাল্টা যেতে কি কি লাগে

নিজে মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য আবেদন করতে কিংবা কোনো ভিসা এজেন্সিকে দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার আবেদন করা, ওয়ার্ক পারমিট পেলে ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু ডকুমেন্ট লাগে। মাল্টা কাজের ভিসায় যেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদি বৈধ পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ডের কপি
  • গত ০৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • সদ্য তোলার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
  • কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন
  • আত্মীয়ের রেফারেন্সে গেলে রেফারেন্স লেটার
  • নিয়োগকর্তা থেকে দেয়া কাজের অফার লেটার

মাল্টা যেতে ওয়ার্ক পারমিট আবেদন করা থেকে শুরু করে ভিসা আবেদন সহ সকল কাজে এসব ডকুমেন্ট লাগবে। তাই, মাল্টা যেতে চাইলে উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করুন।

আরও পড়ুন – লিথুনিয়া কাজের ভিসা

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের নিয়ম

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার জন্য VFS Global এর অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে পারবেন অথবা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। VFS Global এর ওয়েবসাইট ভিজিট করে Apply for visa লেখায় ক্লিক করে পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল রিপোর্ট সহ সকল তথ্য সাবমিট করুন। ভিসা করতে ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে।

সরকারিভাবে মাল্টা কাজের ভিসায় যেতে চাইলে যেকোনো ভিসা এজেন্সির সহযোগিতা নিতে পারেন অথবা ভিএফএস গ্লোবাল এর মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করে অ্যাপয়েনমেন্ট বুক করে এরপর অফিস গিয়ে সকল তথ্য এবং ডকুমেন্ট দিয়ে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। সরকারিভাবে মাল্টা যেতে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লেগে থাকে।

এছাড়াও, আপনি চাইলে যেকোনো ভিসা এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ এবং ভিসা আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুন — জাপান যেতে কত টাকা লাগে

মাল্টা কোন কাজের চাহিদা সবথেকে বেশি

মাল্টা যারা যেতে চান, তাদের অনেকের মাঝেই একটি প্রশ্ন রয়েছে। মাল্টা কোন কাজের চাহিদা বেশি? যে কাজের চাহিদা বেশি সেই ভিসায় মাল্টা যেতে পারলে অধিক টাকা ইনকাম করা সম্ভব। তো চলুন, মাল্টায় কোন কাজের চাহিদা বেশি জেনে নেয়া যাক।

  • কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
  • হাউস কিপার
  • এসি টেকনিশিয়ান
  • মাসেজ থেরাপিস্ট
  • মেইনটেনেন্স ওয়ার্কার
  • রেস্টুরেন্ট ওয়েটার
  • কিচেন পোর্টার
  • ফুড ডেলিভারি
  • প্লাম্বার শ্রমিক
  • বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিক
  • ড্রাইভার
  • শেফ অ্যাসিস্ট্যান্ট
  • সুসি শেফ ইত্যাদি।

উপরোক্ত কাজের ভিসা করে মাল্টা গেলে অল্প সময়ের মাঝে অধিক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। মাল্টায় এসব কাজের চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়াও, আপনার যদি উপরোক্ত কাজগুলোর যেকোনো কাজের উপর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন – ফিজি কাজের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট

এছাড়াও, প্রতি মাসে বিভিন্ন বোনাস এবং প্রমোশনের সুযোগ তো থাকছেই। তাই, যেকোনো কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করে তবেই প্রবাস যাওয়ার চেষ্টা করুন।

মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে

মাল্টা যেতে ওয়ার্ক পারমিট আবেদন, ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ, ভিসা প্রসেসিং, ভিসা ফি, প্লেনের টিকেট, ভিসা অ্যাপয়েনমেন্ট বুকিং সহ আরও কিছু আনুসাঙ্গিক খরচ মিলে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। ৩-৪ লক্ষ টাকায় কাজের ভিসায় মাল্টা যেতে পারবেন।

মাল্টা কাজের ভিসায় যাওয়ার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে –

  • ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে
  • সরকারিভাবে মাল্টা ভিসা আবেদন করে
  • দালালের মাধ্যমে
  • মাল্টায় থাকা কোন আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যের রেফারেন্সে

এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটির মাধ্যমে আপনি মাল্টা যেতে পারবেন। ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় মাল্টা যেতে চাইলে সরকারিভাবে মাল্টা ভিসা আবেদন করে এবং যেকোনো ভিসা এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়াও, কারও রেফারেন্স এর মাধ্যমেও যেতে পারবেন।

আরও পড়ুন – কানাডা জব ভিসা

চেষ্টা করবেন দালালের পাল্লায় না পড়ার জন্য। কারণ, মাল্টা কাজের ভিসা আবেদন করতে যত টাকা লাগার কথা, তার থেকে বেশি দালাল নিয়ে নিবে। এছাড়াও, দালালের মাধ্যমে ভিসা করলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে তা নিচের তালিকায় দেখুন –

মাল্টা ভিসা করার নিয়মকত টাকা লাগবে
সরকারিভাবে মাল্টা ভিসায় গেলে৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা
ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে মাল্টা গেলে৬ থেকে ৮ লক্ষ টকা
পরিবার বা আত্মীয়ের রেফারেন্সে মাল্টা গেলে৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা
দালালের সাহায্যে মাল্টা গেলে৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করার জন্য ক্ষেত্রভেদে খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। চেষ্টা করবেন সরকারিভাবে মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করার পর ভিসা সংগ্রহ করে মাল্টা যেতে। এতে করে অল্প খরচে মাল্টা যেতে পারবেন।

মাল্টা কাজের বেতন কত

মাল্টা কাজের ভিসা একমাসের বেতন কত এটি অনেকেই জানতে চান। মাল্টা কাজের ভিসায় গেলে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন। মাল্টায় টাকার মান অনেক বেশি। তাই, প্রতি মাসে অনায়াসে ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন।

এছাড়া, মাল্টা কাজের ভিসায় গিয়ে আপনি যদি দক্ষতার সহিত কাজ করতে পারেন, তাহলে আরও বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন। মাল্টা কাজের বেতন কত নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

মাল্টা কাজের ভিসাএকমাসের বেতন
রিসেপশনিস্ট৯০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা
রেস্ট্যুরেন্ট ওয়েটার৮০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা
ক্লিনার৭০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা
গার্মেন্টস শ্রমিক৭০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা
ডেলিভারি ম্যান৮৫,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা
ড্রাইভার৯০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা
কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার৭০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা
ইলেকট্রিশিয়ান১,০০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা
শেফ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা
হিসাবরক্ষক১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার১,৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা
ডাক্তার৪,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা

এসব ভিসায় মাল্টা গেলে পাশে উল্লেখ করে দেয়া বেতন পাবেন। কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আরও বেশি বেতন পাবেন।

আরও পড়ুন – অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা করার উপায়

বাংলাদেশ থেকে মাল্টা যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে মাল্টা যাওয়ার উপায় রয়েছে কয়েকটি। এগুলো হচ্ছে, কাজের ভিসায় মাল্টা যাওয়া, ভিজিট ভিসায় মাল্টা যাওয়া এবং স্টুডেন্ট ভিসায় মাল্টা যাওয়া। মাল্টা গিয়ে টাকা ইনকাম করার ইচ্ছে থাকলে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার পর ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করে মাল্টা যেতে পারবেন।

এছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় এবং ভিজিট ভিসায় মাল্টা যেতে পারবেন। মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় গেলে ৩-৪ লক্ষ টাকা লাগবে। স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে ১-২.৫ লক্ষ টাকা এবং ভিজিট ভিসায় গেলে ১-১.৫ লক্ষ টাকা লেগে থাকে।

সরকারি ভাবে মাল্টা যাওয়ার উপায়

সরকারি ভাবে মাল্টা যেতে চাইলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আবেদন করতে হবে। ভিএফএস গ্লোবাল এর অফিসে উপস্থিত হয়ে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও, ভিএফএস গ্লোবাল এর ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

সরকারিভাবে মাল্টা যেতে পারবেন মাত্র ৩-৪ লক্ষ টাকায়। ভিসা প্রসেসিং, ভিসা ফি, ফ্লাইট টিকেট, পাসপোর্ট সহ সকল খরচ টি টাকায় হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন – দুবাই ভিজিট ভিসা খরচ

শেষ কথা

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চাইলে অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে ভিসা আবেদন করে মাল্টা যেতে পারবেন অনেক সহজেই। এজন্য, ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় গেলে শুধু নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 Comments

      1. vaiya ami vmt kotha theke uthabo ar police clear kothate ke nibo ar Bangladesh a ki ar kno Ambassador ase naki janaben ?