জাপান যেতে চান কিন্তু জাপান যেতে কত টাকা লাগে জানেন না? জাপান যেতে হলে জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হবে। সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এবং জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি এসব বিষয় জানতে পারবেন এই পোস্টে।
আমাদের দেশের অনেকের ইচ্ছে জাপান গিয়ে পড়ালেখা করা এবং কাজ করা। কেউবা আবার জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে গিয়ে সেখানে প্রবাসী হিসেবে থেকে কাজ করে টাকা ইনকাম করতে চান। জাপান গিয়ে টাকা ইনকাম করতে চাইলে জাপান যেতে কত টাকা লাগে এবং জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি এসব বিষয় জানতে হবে।
তাই, আমি আজ আপনাদের সাথে সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এবং বাংলাদেশ থেকে জাপান যেতে কত টাকা লাগে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
এক নজরে পোস্টের বিষয়বস্তু
জাপান যেতে কত টাকা লাগে
সরকারিভাবে জাপান যেতে পাসপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ভাষা শিক্ষা সহ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। সরকারিভাবে জাপান যেতে প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং এর সময় কোনো ফি দিতে হয়না। কিন্তু, বেসরকারি বা অন্যভাবে জাপান যেতে চাইলে ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা অব্দি লেগে থাকে।
অল্প খরচে জাপান যেতে চাইলে প্রথমেই সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এজন্য, জাপানের ভাষা শিক্ষা নিতে হবে। জাপানের ভাষা শিক্ষা এবং প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং করতে হবে। ভাষা শিক্ষার সময় ২০ হাজার টাকা লাগতে পারে। তবে, প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং এর সময় কোনো টাকা লাগবে না। তবে, ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে খাবারের খরচ নিজেকে বহন করতে হবে।
সব মিলিয়ে, সরকারিভাবে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে জাপান যেতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। তবে, বেসরকারিভাবে জাপান যেতে চাইলে ৮ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১২ লক্ষ টাকা অব্দি লাগতে পারে।
জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
প্রযুক্তি নির্ভর দেশ জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পদ্ধতিতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে আধুনিক কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কম্পিউটার অপারেটর, টেকনিশিয়ান, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিকের মতো পেশাদারদের জন্য এখানে প্রচুর চাহিদা। বিভিন্ন কোম্পানিতেও এই শ্রমিকদের উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
এছাড়াও, রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কৃষি, হোটেল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নার্সিং, নির্মাণ, নিরাপত্তা, খাবার সরবরাহ, দোকানদারির মতো কাজের জন্য ভিসা নেওয়া সম্ভব। এই সকল ক্ষেত্রে বেতনও তুলনামূলকভাবে বেশি।
সংক্ষেপে, জাপানে প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সেবা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে। দক্ষ ও আগ্রহী কর্মীদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
জাপানি ভাষা শিক্ষা ট্রেনিং শেষ করে সার্টিফিকেট নিতে হবে। এরপর, জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য সরকারিভাবে BMET রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং Technical Intern কার্যক্রম এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। BMET অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটি BMET এর মেইলে পাঠাতে হবে।
বিএমটির কার্যালয় থেকে বাছাইকৃত প্রার্থীদের IM Japan – এর প্রতিনিধি দল প্রাথমিক ইন্টার্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এই পরীক্ষায় গণিত, জাপানি ভাষা ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করা হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে হবে।
কোর্স সম্পন্ন করার পর যোগ্য প্রার্থীদের জাপানে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। ভিসা প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীকে কোন খরচ বহন করতে হবে না।
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপান অনেক উন্নত এবং আধুনিক। তাই, জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে হলে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে যেসব দক্ষতা লাগবে তা হচ্ছে —
- যেকোনো একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে
- জাপানি ভাষা শিখতে হবে এবং সার্টিফিকেট থাকতে হবে
- জাপান যাওয়ার জন্য TTC কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে
- এসএসসি/এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে
- ১৮ বছর বয়সের বেশি হতে হবে
এই যোগ্যতা গুলো যদি আপনার মাঝে থাকে, তাহলে জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে কি কি কাগজ লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে কি কি লাগে
- মেডিকেল রিপোর্ট
- বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ভিসার আবেদন পত্র (তারিখসহ সঠিকভাবে পূরনকৃত)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের দুই কপি রঙিন ছবি
- কমপক্ষে ০৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
- ভোটার আইডি কার্ডের কপি
- করোনা ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
- নির্দিষ্ট কাজের উপর দক্ষতার প্রমাণপত্র
- জাপানী ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট
- জব অফার লেটার
সরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার উপায় ২০২৪
সরকারিভাবে জাপান যেতে চাইলে বিএমইটি এর মাধ্যমে IM Japan এর সহায়তায় আবেদন করতে হবে। জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে যেসব শর্ত উপরে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে, সেগুলো যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
পূর্বে জাপান গিয়েছিলেন এমন কেউ আবেদন করতে পারবেন না। নতুন আগ্রহী প্রার্থীরা জাপান যেতে চাইলে বিএমইটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জাপান যাওয়ার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করবেন। এরপর, নিজের ব্যক্তিগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল তথ্য দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করবেন। কাজের উপর দক্ষতাও উল্লেখ করতে হবে। এরপর, আবেদনপত্রটি BMET এর মেইলে পাঠিয়ে দিতে হবে।
বিএমইটি থেকে আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই করা হবে এবং যারা টিকবে, তাদেরকে মোবাইলে ম্যাসেজ করে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। TTC কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পরীক্ষা দিতে হবে।
জাপানে যাওয়ার জন্য বিএমইটির টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পরীক্ষা
জাপান যাওয়ার জন্য বিএমইটির মাধ্যমে IM Japan এর আবেদন করার পর, আবেদন যাচাই করে যাদেরকে বাছাই করে এসএমএস করে পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে, তারা TTC এর কার্যালয়ে উপস্থিত হবেন। এরপর, তাদের নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।
- গণিত এবং জাপানের ভাষা শিক্ষার পরীক্ষা নেয়া হবে
- শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করার জন্য পুষ আপ, সিট আপ এবং দৌড়ানো সহ কিছু পরীক্ষা নেয়া হবে
IM Japan – এর একটি প্রতিনিধি দল বাছাইকৃত প্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে।
যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে, তাদেরকে BMET এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। অতঃপর, ৬ মাসের জন্য প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং শেষ করতে হবে। যারা এই ট্রেনিং সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, তাদেরকে জাপানে ৩ বছরের জন্য কাজ করার পারমিট দেয়া হবে।
কাজে দক্ষতা থাকলে পরবর্তীতে আরও ০২ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা যায়। এভাবে করে জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে জাপান গিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। জাপান কাজের ভিসা করার জন্য যেসব ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে ট্রেনিং নিতে পারবেন তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
জাপানী ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
- গাইবান্ধা টিটিসি
- কুষ্টিয়া টিটিসি
- জামালপুর টিটিসি
- মৌলভীবাজার টিটিসি
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া টিটিসি
- বাংলাদেশ কোরিয়া টিটিসি (চট্টগ্রাম)
- নরসিংদী টিটিসি
- নোয়াখালী টিটিসি
- নীলফামারী টিটিসি
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ টিটিসি
- বান্দরবান টিটিসি
- খুলনা টিটিসি
- মাদারিপুর টিটিসি
- পাবনা টিটিসি
- প্রবাসী কল্যাণ ভবন (ঢাকা)
- শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা টিটিসি (মিরপুর)
- নেত্রকোনা টিটিসি
- রংপুর টিটিসি
- ঝিনাইদহ টিটিসি
- রাঙামাটি টিটিসি
- দিনাজপুর টিটিসি
- জয়পুরহাট টিটিসি
- মাগুরা টিটিসি
- যশোর টিটিসি
- বাংলাদেশ কোরিয়া টিটিসি (মিরপুর)
- রাজশাহী টিটিসি
- ময়মনসিংহ টিটিসি
উপরোক্ত এই জাপান ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র থেকে জাপানি ভাষা শিখতে পারবেন। এরপর, এখানে থেকে আপনাকে একটি জাপানি ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট দেয়া হবে। সেটি দিয়ে বিএমইটির মাধ্যমে জাপান কাজের ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
সারকথা
আজকের এই ব্লগে জাপান যেতে কত টাকা লাগে, জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করার উপায়, সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। জাপান কাজের ভিসা পেতে চাইলে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। যেকোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাপানেট ভিসা সম্পকে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য। একটি প্রশ্ন; টিটিসি থেকে কম্পিউটার অপারেশন এর উপর কোর্স করা আছে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সনদ আছে। আমার বয়স ৪৩ বছর চলমান। আই,কম পাস। আমি কি জাপান বা ইউরোপ কান্ট্রিতে যেতে পারব ভাই।
জি, যেতে পারবেন। আপনার বয়স আছে। আবেদন করুন ভিসার জন্য।