খাস জমি কি, খাস জমি কাকে বলে এবং খাস জমি চেনার উপায় জানতে পারবেন এই পোস্টে। কীভাবে দেখেই বুঝতে পারবেন যে কোন জমিটি খাস জমি এবং কোনটি মালিকানাভুক্ত জমি সেটি নিয়ে আলোচনা করবো এই পোস্টে।

অনেকেই খাস জমি কাকে বলে জানেন না। এছাড়াও, খাস জমি চেনার উপায় সম্পর্কেও অধিকাংশ মানুষ জানেন না। তো চলুন, খাস জমি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনে নেয়া যাক।

খাস জমি কি

খাস জমি বলতে বোঝায় সরকারের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন যেকোনো ভূমি। এসকল জমি সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করা হতে পারে অথবা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।

খাস জমি
খাস জমি

খাস জমি আবার দুই প্রকার। এগুলো হচ্ছে, কৃষি খাস জমি এবং অকৃষি খাস জমি। কৃষি খাস জমি এবং অকৃষি খাস জমি আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে বন্দোবস্ত করার সুযোগ দেয়া হয়।

কৃষি খাস জমি

কৃষি খাস জমিগুলো কৃষি কাজের জন্য বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়। যে কেউ চাইলে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত করার অধিকার পেতে পারেন।

অকৃষি খাস জমি

অকৃষি খাস জমিগুলো কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়। যেমন: আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, খাল-বিল, ইত্যাদি। কৃষি কাজ ব্যতীত এসব কাজের জন্য চাইলেই জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে যে কেউ এসব খাস জমির বন্দোবস্ত নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন – অনলাইনে ই নামজারি যাচাই

খাস জমি চেনার উপায়

খাস জমি চেনার উপায় হচ্ছে ৮ নম্বর রেজিস্টার তল্লাশি, খতিয়ান ও দাগ নম্বর যাচাই, মালিকানা যাচাই ইত্যাদি। খাস জমি খুঁজে পাওয়ার উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ৮ নম্বর রেজিস্ট্রার তল্লাশি করা। এই রেজিস্ট্রারে কেবলমাত্র সরকারের মালিকানাধীন জমিগুলোর তথ্যই সংরক্ষিত থাকে।

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সহজেই যেকোনো খাস জমি বের করতে পারবেন। এছাড়াও, জমির খতিয়ান নাম্বর ১ হলে এবং দাগ নাম্বারের পাশে খাস উল্লেখ থাকলে সেটি খাস জমি। জমির মালিকানা যাচাই করার মাধ্যমেও জমিটি খাস কিনা যাচাই করা যায়।

এছাড়াও, এলাকার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খাস জমি চিনতে পারবেন। খাস জমি সাধারণত বড় আকারের হয় এবং খাস জমি ফাঁকা থাকে কিংবা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকে এগুলোতে।

আরও পড়ুন – পুরাতন দলিল তল্লাশি করুন অনলাইনে

খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম

খাস জমি রেকর্ড করার জন্য জেলা প্রশাসক এর নিকট আবেদন করে আবেদন অনুমোদিত হলে ভূমি অফিসের ওয়েবসাইট https://mutation.land.gov.bd ভিজিট করে কিংবা এসি ল্যান্ড অফিস গিয়ে নামজারি খতিয়ানের আবেদন করতে হবে। এজন্য, ২০ টাকা কোর্ট ফি, প্রসেস জারি ফি ৫০ টাকা, ডিসিয়ার কাটার জন্য ১১০০ টাকা সহ মোট ১১৭০ টাকা খরচ করতে হয়।

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে সহজেই খাস জমি আপনার নামে রেকর্ড করে নিতে পারবেন। খাস জমি লিজ নেয়ার পর ৯৯ বছর সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, খাস জমি নিতে চাইলে অবশ্যই কিছু শর্ত মানতে হবে।

সরকারি খাস জমির বৈশিষ্ট্য

সরকারি খাস জমির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যা দেখে সহজেই খাস জমি চিহ্নিত করা সম্ভব। নিম্নে এই বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করে দেয়া রয়েছে।

  • খাস জমির মালিকানা সরকারের
  • খাস জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকবে না
  • খাস জমিগুলো উক্ত জেলা প্রশাসকের অধীনে সংরক্ষিত থাকে
  • সাধারণত খাস জমি ফাঁকা কিংবা সরকারি ভবন থাকে
  • খাস জমির কোনো খাজনা দিতে হয় না
  • খাস জমিগুলো সরকারি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে সহজেই খাস জমি চিহ্নিত করতে পারবেন। প্রতিটি খাস জমির একই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

খাস জমি কি বিক্রি করা যায়

না, খাস জমি বিক্রি করা যায় না। কারণ খাস জমির মালিকানা সরকারের। এসকল জমি বিভিন্ন জনস্বার্থে ব্যবহার করা হয়। খাস জমি বিক্রি করার চেষ্টা করলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক অসাধু ব্যক্তি সরকারি খাস জমি নিজের বলে বিক্রি করার চেষ্টা করে থাকেন।

এজন্য, জমি কেনার পূর্বে খাস জমি চেনার উপায় জানতে হবে। তাহলে, ভুল করে সরকারি খাস জমি কিনে ফেলার ভয় থাকবে না। খাস জমির মালিকানা এবং অধিকার সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের। তাই, এই ধরনের জমি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

খাস জমি দলিল করার নিয়ম

যেকোনো ব্যক্তি চাইলে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করার মাধ্যমে খাস জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিতে পারবে। এজন্য খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। তবে, খাস জমি রেকর্ড করতে চাইলে উক্ত ব্যক্তিকে জমিহীন বা সর্বোচ্চ ১০ শতক জমির মালিক হতে হবে।

খাস জমি কারা লিজ নিতে পারবে

বাংলাদেশের নাগরিক এমন যেকোনো ব্যক্তি ১০০ শতক জমি সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য খাস জমি লিজ নিতে পারবে। খাস জমি দুই ধরনের হয়। কৃষি খাস জমি এবং অকৃষি খাস জমি। এই দুই ধরনের জমিই দুই ধরনের উদ্দেশ্যে নিয়ে লিজ নেয়া যাবে। এজন্য, জেলা প্রশাসকের নিকট জমি লিজ নেয়ার আবেদন করতে হবে।

এছাড়াও, আমাদের ওয়েবসাইটে নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান, বি এস খতিয়ান অনুসন্ধান, এস এ খতিয়ান অনুসন্ধান, বি আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করার পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত তথ্য পাবেন।

শেষ কথা

খাস জমি কি এবং খাস জমি চেনার উপায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে খাস জমি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 Comments

  1. Great work..Keep it up. This is very useful for people who don’t know anything about land or registered land or type of land. Well done!